
শুধু ভারত নয় অন্য উৎস থেকেও করোনা ভ্যকসিন দ্রুত পাবার জন্য তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,চলতি বছরের মধ্যে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষের জন্য শুধু টিকা পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা রয়েছে।
তার মধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে আসবে ৯ শতাংশ এবং কোভ্যাক্স থেকে আসবে ৩১ শতাংশ। কোভ্যাক্সের টিকা প্রথম ধাপের ২০ শতাংশ টিকা ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে এবং বাকিটা ডিসেম্বরের মধ্যে আসার কথা রয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন,ভ্যাকসিন সরবরাহের ব্যাপারে ভারতের সাথে সই করা চুক্তির ব্যত্যয় হবে না। সময়মতোই টিকা পাবে বাংলাদেশ। ভারতের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর আগে অন্য দেশকে বাণিজ্যিকভাবে টিকা না দেওয়ার বিষয়ে ভারতের আপত্তির পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,বাংলাদেশ সরকার, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো এবং সেরামের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ চুক্তিমতো টিকা পাবে।
তবে বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার মাঝে এখন নতুন উৎস থেকেও টিকা আনার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। দেশের সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা সরব হয়ে উঠেছেন নতুন সোর্স বা টিকা আনার উৎস নিয়ে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যসচিব মো. আব্দুল মান্নান গণমাধ্যমে জানিয়েছেন,‘আমরা শুধু যে একটি সোর্সের ওপর নির্ভর করে আছি তা ঠিক নয়। কোভ্যাক্স থেকেও আমরা টিকা পাচ্ছি;হয়তো কিছুটা দেরি হবে। এ ছাড়া আমরা শুরু থেকে আরো বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলাম। এখনো সেই যোগাযোগ অব্যাহত আছে। এ ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়ার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি আমরা বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও আহ্বান জানিয়েছি এগিয়ে আসার জন্য কিন্তু খুব একটা যে কেউ আসছে তেমন নয়।’
সচিব বলেছেন,‘যেহেতু ট্রায়াল অনেক সময়ের ও জটিলতার ব্যাপার তাই আমরা এখন ট্রায়ালের পরিবর্তে বরং আমদানি ও উৎপাদনের দিকে বেশি নজর রাখছি।’
কোভিড-১৯ মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির সিনিয়র সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলামও বলেন,‘আমরা কয়েক মাস ধরে বলে এলেও সরকার একটির বাইরে আর কোনো উৎস জোগাড় করতে পারল না। তাই চীনের সিনোভ্যাক নিয়ে অযথা সময়ক্ষেপণ করে ওই গ্রুপকে তাড়িয়ে দিল। আবার নিজেদের দেশের একটি কোম্পানি এগিয়ে এসেছিল তাদেরও সহায়তার কোনো পদক্ষেপ নেই। এমনভাবে চললে তো মুশকিলে পড়তে হবে।’
জানা গেছে,
সেরাম ও কোভ্যাক্সের বাইরে চীনের একাধিক কোম্পানির টিকা আমদানি দেশে উৎপাদন ও ট্রায়ালের বিষয়ে ভেতরে ভেতরে আগে থেকেই কাজ এগিয়ে চলছে যা দুই দিন ধরে নতুন গতি পেতে শুরু করেছে। এ ছাড়া রাশিয়ার টিকার বিষয়েও নাড়াচাড়া পড়েছে। এ ক্ষেত্রে সরাসরি সরকারিভাবে না হলেও বেসরকারি উদ্যোগের ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন টিকা নিয়েও কিছুটা সক্রিয় হয়েছেন সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পাশাপাশি কোভ্যাক্স থেকে পূর্বনির্ধারিত টিকা পাওয়া নিয়ে যাতে নতুন কোনো জটিলতায় আটকা পড়তে না হয় সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
চলতি বছরে টিকা জোগাড় করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে এখন ৫০০ কোটি ডলারের জোগান রয়েছে। এর মধ্যে গতকাল ভারতে টিকা সরবরাহকারী সংস্থা সেরামকে ৫০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
ওদিকে,কোভ্যাক্সের নির্ধারিত দাম অনুসারে প্রতি ডোজ টিকার জন্য দিতে হবে দুই ডলার করে। দুই ডোজের জন্য জনপ্রতি ধরা হয়েছে চার ডলার করে। এর সঙ্গে পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতিজনকে টিকা প্রয়োগের জন্য ধরা হয়েছে আরো আড়াই ডলার করে। সব মিলিয়ে দেশে কোভ্যাক্স থেকে টিকা আনতে ও প্রয়োগ করতে মাথাপিছু খরচ ধরা হয়েছে প্রাথমিকভাবে সাড়ে ছয় ডলার করে।
অর্থাৎ কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশ যদি তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে তবে এর পেছনে ব্যয় হবে ২০ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
















