
কথায় আছে, ক্রিকেট গৌরবময় চরম অনিশ্চয়তার খেলা। এখানে আগে থেকে কিছুই বলা যায় না। তবে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে কথাটা যতটা সত্যি, আর কারোর জন্য ততটা নয়। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের মতো এবারের আসরেও শুরুর কয়েকটা ম্যাচ হেরে কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল তারা। তারপর ভারতের কাছে ভরাডুবির পর সেমিফাইনালের আশা যখন ক্রমে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছিল, তখনই দক্ষিণ আফ্রিকা আর নিউজিল্যান্ডকে পরপর হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় সরফরাজ বাহিনী। এই টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকভাবে ভালো বল করেছেন মোহাম্মদ আমির। এজবাস্টনে বাবর আজমের অসাধারণ সেঞ্চুরির পর সরফরাজদের ব্যাটিংকেও অনেক বেশি মজবুত দেখাচ্ছে। পরপর দুটো ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে পাকিস্তান, কিন্তু সেমিফাইনালের পথ সুগম করতে গেলে এবার আফগানিস্তানকে হারাতেই হবে তাদের। বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় হেডিংলির লিডসে দল দুটো একে অপরের মুখোমুখি হবে।
অন্যদিকে, দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আসা আফগানরা এবার অনেকটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো খেলেছে। প্রতিভার ছড়াছড়ি তাদের দলেও। তার ঝলক মাঝেমধ্যে দেখা গেলেও কোনো ম্যাচেই আগাগোড়া আধিপত্য বজায় রাখতে পারেনি তারা। ফলে পয়েন্টের ভাঁড়ার এখনো শূন্যের কোটায় আটকে আছে। তবে গত দুটো ম্যাচে ভারত আর বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের বোলিং পারফরমেন্স যথেষ্ট আশা জাগিয়েছিল। যদিও ব্যাটিং ব্যর্থতায় দুটো ম্যাচেই তাদের জয় থেকে ছিটকে দিয়েছে। তবে ভুললে চলবে না, বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানকে তিন উইকেটে হারিয়েছিল আফগানরা। তাই এবার স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামবে তারা।
ইতোমধ্যেই প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ায় আফগানরা আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে চাপমুক্ত হয়ে খেলবে এটা সহজেই অনুমেয়। আর সেটাই কাল হয়ে উঠতে পারে পাকবাহিনীর জন্য। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে নেমে তবুও জয়ের দেখা পেয়েছিল নবীন আফগানিস্তান। তবে এবার এখন পর্যন্ত তাও হচ্ছে না। ৭ ম্যাচ খেলে হিসাবের খেরো খাতাই খুলতে পারেনি নাইব বাহিনী। পেছনের ব্যর্থতা ভুলে শেষ দুটো ম্যাচে জিততে চাইবে তারা। যে দলে মুজিবের মতো একজন ঘূর্ণি জাদুকর আছে, নবির মতো একজন পারফেক্ট অলরাউন্ডার আছে তারা তো জেতার আশা করতেই পারে।
গত ম্যাচে উড়ন্ত নিউজিল্যান্ডকে মাটিতে নামিয়ে শেষ চারের আশাকে আরও জোরালো করেছে সরফরাজরা। কিউইদের বিপক্ষে জয়টা পাকিস্তানের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে মহাগুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর ওই গুরুত্বপূর্ণ জয়ের নায়ক বাবর আজম। গত বুধবার এজবাস্টনে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করে গেছেন বাবর। ১০১ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংসে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরিতে রঙিন করেছেন পাকিস্তানের স্বপ্ন। ১৯৯৭ সালের পর প্রথম নন-ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে শতক হাঁকান বাবর।
কিউই বধের পর শেষ দুই ম্যাচেও জিততে আশাবাদী বাবর। স্বপ্ন দেখছেন সেমিফাইনালের, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী। একটি করে ম্যাচ ধরে ধরে এগোচ্ছি। আশা করি সেমিফাইনালে উঠব। আমাদের সেদিকেই মনোযোগ।’ ২৪ বছর বয়সি বাবরের সামনে শচিন টেন্ডুলকারের রেকর্ড ভাঙার সুযোগ। ১৯৯৬ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে ৫২৩ রান করেন ভারতীয় ব্যাটিং গ্রেট, এক বিশ্বকাপে সর্বকালের শীর্ষ অনূর্ধ্ব-২৫ বছর বয়সি ব্যাটসম্যানের তালিকায় সবার উপরে তিনি। বাবর তার চেয়ে পিছিয়ে ১৯০ রানে। ৩৩৩ রান করে এরই মধ্যে ব্রায়ান লারাকে (১৯৯২) স্পর্শ করেছেন তিনি। ১৯৯৯ ও ২০০৭ সালে রিকি পন্টিংয়ের ৩৫৪ ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের ৩৭২ রান থেকে আর কয়েক হাত দূরে বাবর। এই পারফরম্যান্স ধরে রাখলে নিশ্চয় টপকে যাবেন সবাইকে!
















